নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজারকে গতিশীল করতে নানামুখী উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই অংশ হিসেবে কোনও কোম্পানির শ্রেণিমানের যাতে অবনতি না ঘটে, সেই উদ্যোগও নিয়েছে বিএসইসি। গত বুধবার (৪ নভেম্বর) বিএসইসির কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কমিশন সভার সিদ্ধান্তের পর বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। অবশ্য পরপর চার সপ্তাহ শান্ত থাকার পর ফের গতি আরও বেড়েছে শেয়ারবাজারে। বিনিয়োগকারীরা আগের চার সপ্তাহে যে পরিমাণ টাকা হারিয়েছিল, গত এক সপ্তাহেই তার অর্ধেক টাকা ফেরত পেয়েছেন। গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন বেড়েছে ৬ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। মূল্য সূচক ও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার মধ্য দিয়ে গত সপ্তাহ পার করেছে দেশের শেয়ারবাজার। যদিও আগের টানা চার সপ্তাহে ১২ হাজার কোটি টাকা হারিয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা।
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) লেনদেন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৪১ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে এর পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৯১ হাজার ২৫১ কোটি টাকা। তথ্য বলছে, গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে ডিএসই’র বাজার মূলধন কমে ৫ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা। তার আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে এক হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। তারও আগের সপ্তাহে কমে যায় এক হাজার ১২৩ কোটি টাকা এবং এরও আগের সপ্তাহে কমে ৩ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। এ হিসাবে টানা চার সপ্তাহে ডিএসই’র বাজার মূলধন কমে ১২ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা।
এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসই-এক্স বেড়েছে ৯৬ দশমিক শূন্য ২ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ৬৭ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট। গত সপ্তাহে প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে ডিএসই’র অপর দুই সূচক। এর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক বেড়েছে ২১ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ১৫ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট। আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক বেড়েছে ৪৫ দশমিক ৫১ পয়েন্ট। যদিও আগের সপ্তাহে এ সূচকটি কমেছিল ১২ দশমিক ৩১ পয়েন্ট।
দেখা যাচ্ছে, মূল্য সূচকের উত্থানের পাশাপাশি গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। অর্থাৎ সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১৭১টি প্রতিষ্ঠান। আর দাম কমেছে ১২১টির। তবে ৬৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৮৪৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৯৯০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১৪৬ কোটি ৮ লাখ টাকা বা ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ২২২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৩ হাজার ৯৬২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। সেই হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে ২৬০ কোটি ১৭ লাখ টাকা। গত সপ্তাহে ডিএসইর মূল বাজারে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালের শেয়ার। উল্লেখ্য, গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে সরকারি ছুটির কারণে একদিন লেনদেন কম হওয়ায় গড় লেনদেন গত সপ্তাহের চেয়ে বেশি হলেও মোট লেনদেন কম হয়েছে।
এদিকে বিএসইসির সর্বশেষ সভার সিদ্ধান্তের ফলে শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীর আস্থা আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘বিএসইসির সিদ্ধান্তটি বাজার গতিশীল হওয়ার জন্য সহায়ক হবে। কারণ, করোনায় অনেক ভালো প্রতিষ্ঠানও সমস্যায় পড়েছে। লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে তাদের জেড ক্যাটারিতে পড়তে হতো। তবে যে সব প্রতিষ্ঠান ভালো করছে তারাতো ভালো জায়গাতে থাকবে।’